Saturday, 26 December 2015

আমার বাড়ি

আমার বাড়ির কাছে,
বেড়ার ধারে পুরানো বটের গাছে,
সকাল হলেই পাখিরা সব গাছের ডালে নাচে

আমার বাড়ির পাশে,
ফাঁকা মাঠ এক ভরা সবুজ ঘাসে,
বিকেল হলেই ছেলেরা সব খেলতে মাঠে আসে

আমার বাড়ির সামনে দিয়ে,
রোজই চলে গরুর গাড়ি ধূলো উড়িয়ে
দৌড়ে আসে একটি ষাঁড় তার শিং দুটো উঁচিয়ে

বাড়ির ইঁটগুলো গেছে ক্ষয়ে,
আমার বাড়ি টিকে আছে সবকিছুই সয়ে,
গাঁয়ের শেষে অজয় নদী, অবিরাম চলেছে বয়ে

আমার বাড়ির আঙিনায়
মাথার ওপর চাঁদ উঠে নীল আকাশের গায়

অবশেষে সেই রাত কাটে শেষে, সকাল হয়ে যায়
আমার গাঁয়ের নতুন কবিতা

আমার গাঁয়ে, রোজ সকাল হলে,
গাঁয়ের চাষীরা মাঠে করে চাষ
সাড়ে আটটার সিটি বাজে দূরে
সবাই কাজ করে বারো মাস

আমার গাঁয়ে, রাত কেটে শেষে
ভোরে মসজিদে হয় আজান
প্রভাত পাখির কণ্ঠে শুনি আমি
রোজ ঘুম ভাঙানোর গান

সকাল হলো ফুটলো কত ফুল
আমের বাগানে কোকিল ডাকে
নদীর জল নিয়ে গাঁয়ের বধু
আপন ঘরে যায় কলসী কাঁখে

সুয্যি ডোবে আঁধার হলো
ক্লান্ত পাখিরা বাসায় ফেরে
দিনের আলো হারিয়ে গিয়ে
সারা গ্রাম থাকে আঁধারে

পথের বাঁকে দুরে শেয়াল ডাকে,
জোনাকিরা দেয় সব আলো
নিশুতি রাতে পেঁচা ডাকে
ঘেউ ঘেউ করে কুকুরগুলো

রাতের আকাশে চাঁদ ওঠে,
তারারা সব মিটিমিটি চায়
তারপরে রাত কেটে গিয়ে

কখন যে সকাল হয়ে যায়




আঁধার কথা কয়

মোর গাঁয়ের পথে, একতারা হাতে
বাউল চলেছে গান গেয়ে
নদীর স্রোতের টানে, গাঁয়ের মাঝি
চালায় নৌকা বৈঠা বেয়ে

মোর গাঁয়ের পথে, উড়িয়ে ধূলো
চলেছে চাষীর গোরুর গাড়ি
গাঁয়ের কামার হাতুড়ি চালায়,
কুমোর বানায় মাটির হাঁড়ি

মোর গাঁয়ের তাঁতিরা, তাঁত চালায়
জেলেরা জাল ফেলে পুকুরে
মোর গাঁয়ের রাখাল, চরায় গোরু
বাজায় বাঁশি রাখালিয়া সুরে

বাঁশ বাগানের মাথার উপর দিয়ে
লাল সূর্য ডোবে পশ্চিম পানে
তুলসী তলায় জ্বলে ওঠে দীপ

আঁধার কথা কয় কানে কানে



Wednesday, 9 December 2015

ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়

সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে,
ছোট্ট একটা দ্বীপ ইংলণ্ড,
অধিবাসী মাত্র পাঁচ কোটি

চল্লিশ কোটি ভারতবাসীকে
রাখল করে পরাধীন,
ভারতে তারা গড়লো নীলকুঠি

ভারতের স্বাধীনতা সূর্য
হল চির অস্তমিত,
ব্রিটিশ হলো ভারতে ভাগ্যবিধাতা

জননী কাঁদিছে পড়িয়া ধূলায়,
বঙ্গদুলাল আয় ফিরে আয়,
ডাকিছে তার সন্তানেরে ভারতমাতা

লর্ড কার্জন ভারতে এসে,
সিদ্ধান্ত নিল অবশেষে,
তাই করিল সে বঙ্গ বিভাজন

পূর্ব বঙ্গ পশ্চিম বঙ্গ,
ভারতবাসী হল ছত্রভঙ্গ,

ছিন্ন হলো আজ মায়ার বন্ধন



যদি আবার ফিরে আসি

যদি পারি আবার ফিরে আসব
এই বাংলায়, এই সবুজ বাংলায়
এ গাঁয়ের মাটি, নদী, আর
মানুষদের ভালবাসার টানে,
আবার ফিরে আসব
এ গাঁয়ের শীতল, সবুজ ছায়ায়

এ গাঁয়ের মাটিতে সোনা ফলে,
বর্ষায় ভেজা মাটিতে
সোঁদা সোঁদা গন্ধ,
আবার শরতের শিউলির
গন্ধে চিত্ত ভরে ওঠে মোর
তাই যদি পারি আবার ফিরে আসব
এই বাংলায়, এই সবুজ বাংলায়
আমার প্রাণ শীতল করা
এ গাঁয়ের সবুজ ছায়ায়

আমি দেখেছি
এ গাঁয়ের মাটিতে ফলে সবুজ ফসল
আমি শুনেছি,
মন মাতানো রাখালিয়া সুর
এ গাঁয়ের শীতল তরুছায়ায়
আমি আরও শুনেছি,
এ গাঁয়ের বৃক্ষ শাখে বসি
দোয়েল কোকিল গান গায়
তাই যদি পারি আবার ফিরে আসব
এই বাংলায়, এই সবুজ বাংলায়
এ গাঁয়ের শীতল, সবুজ ছায়ায়

এ গাঁয়ের মাটি, আমার মা,
এ গাঁয়ের মানুষ, আমার দেবতা,
এ গাঁয়ে ছায়া আছে, মায়া আছে,
আছে মাটি মায়ের বুকে
সবুজ ফসলের সম্ভাবনা
তাই মাটি মায়ের ডাকে
যদি পারি আবার আমি ফিরে আসব
এই বাংলায়, এই সবুজ বাংলায়

এ গাঁয়ের শীতল সবুজ ছায়ায়




শ্মশানে ফুলের চারা

নদীর তীরে নৌকা বাঁধা,
নাইকো মাঝি ঘাটে
জোছনা কাঁদে বালুচরে
চাঁদ ও তারার সাথে

নদীর জলে জোছনা ঝরে,
ঝিকিমিকি করে তারা,
তারা ফোটে আকাশের গায়,
রাত জেগে দিশাহারা

নদীর কূলে কেহ নাই,
শ্মশানে জ্বলছে চিতা
ফুল-বাগিচায় ঘুমিয়ে গেছে,
মাধবী  অপরাজিতা

জোছনারাতের ঝলসা আগুনে,
শ্মশানে পুড়িছে দেহ
ঘাট নির্জন, নিশুতি রাতে
নদীতটে নাই কেহ

নিশুতি রাতে ঘুমায় শহর
সারা পৃথিবী জুড়ে,
শ্মশানঘাটে ফুলের চারা,
বের হয় মাটি ফুঁড়ে