Tuesday, 19 January 2016

গাঁয়ের মাটির টান

ফুল ফোটে বনে বনে,
বিহগের কলতান
প্রভাত পাখির কণ্ঠে শুনি
ঘুম ভাঙানোর গান

ভাঙা পাঁচিলে আছে বসে
দেখি ময়না চড়ুই পাখি,
ভোরের বেলা আমবাগানে
উঠলো কোকিল ডাকি


পূব গগনে সূর্য উঠেছে
ফুল ফোটে, মোরগ ডাকে
শিশুরা পড়িছে আপন মনে,
ফেরিওয়ালা রোজ হাঁকে

বাডি আমার পাথরচুড়ে,
অজয় নদীর ধারে
সাদা বকেরা আসে উড়ে
নদীতীরে দুই পাড়ে

আমার গাঁয়ের দক্ষিণেতে
কাঁটা কুলের বন
রাতে সেথা শেয়াল ডাকে
শিউরে ওঠে মন

গাঁ আমার, মাটি আমার,
এই গাঁ আমার জন্মভূমি
এই মাটিতে লভিয়া জনম

সত্যই ধন্য হয়েছি আমি










আমার গাঁ ও সবুজ ছায়া

যে দূরে সবুজ ছায়ায়, ছোট্ট আমার গ্রাম,
সামনে দিয়ে অজয় নদী, বইছে অবিশ্রাম
আমার গাঁয়ের পশ্চিম দিকে, কাঁটা কুলের বন,
ভোরের বেলা মোরগ ডাকে, ভরে উঠে মন

আমার গাঁয়ের উত্তর দিকে, তাল খেজুরের সারি,
পূবের পানে, সবুজ খেত, দেখতে সুন্দর ভারি
আমার গাঁয়ের দক্ষিণ দিকে, অজয় নদী বয়,
নদীর ঘাটে, সরু বালুচরে, নৌকা বাঁধা রয়

আমার গাঁয়ে রাঙামাটির, লাল ধূলো সরানে,
একতারাতে, মিঠে সুর, আছে বাউল গানে
আমার গাঁয়ে, আমবাগানে, কোকিল পাখি ডাকে,
পল্লীবধূ যায় জল আনতে, কলসি নিয়ে কাঁখে

সুর্য্যি ডোবে, সন্ধ্যা আসে, নামে সাঁঝের আঁধার,

জোছনায় আলো ঝরে, আমার গাঁয়ের চারিধার




মকর সংক্রান্তির মেলা

নদীর ঘাটে বসেছে আজ,
মকর সংক্রান্তির মেলা,
বসেছে দোকান সারি সারি,
আর সার্কাসের খেলা

দু আনার কেনা মাটির পুতুল,
তিন আনার বাঁশি,
হরেক মাল পাঁচ সিকে দাম,
সেথায় ভিড় বেশি

ময়রা ভোলা বসেছে দোকানে,
টাঙায়েছে সামিয়ানা
রসগোল্লা আর পানতোয়া,
সব পাবে আনা আনা

আলুর চপ ও তেলেভাজা,
পাবে তার দোকানে,
চায়ের ও পানের দোকান,
বসেছে এক কোণে

মনিহারীর দোকান কত,
বসেছে সারি সারি,
পুঁতির মালা ও কানের দুল,
দেখতে সুন্দর ভারি

চুড়ি, মালা, খোপার বল,
কিনতে ইচ্ছে হয়,
দাম শুনে মাথায় হাত,
কিনতে লাগে ভয়

মেলার মাঝে খোকন সোনা,
কাঁদছে বসে একা
হারিয়ে গেছে বাবা মা তার,
পায় না কেন দেখা ?

হাসির চেয়ে কান্না দামী,
আজকে মেলার ভিড়ে,
বসেছে মকর-সংক্রান্তির মেলা,

অজয় নদীর তীরে





পৌষ সংক্রান্তির দিনে

পৌষ মাসে পিঠেপুলি, মহা ধূমধাম,
ঘরে ঘরে পিঠে গড়ে, ধন্য পল্লীগ্রাম
দুধপুলি, গুড় পিঠে, নারিকেল আর,
সকলে করিছে পিঠে, সকল প্রকার

গুড় আর তিল দিয়ে, গড়ে পিঠে কেউ,
সারা গাঁয়ে বয়ে যায়, আনন্দের ঢেউ
সরা পিঠে, বাটি পিঠে, দুধ চাঁছি আর,
নলেন গুড়ের গন্ধ, ভাসে চারিধার

পৌষ মাসে শেষ দিনে, টুসু জাগরণ,
সারা রাত টুসু গান, হরষিত মন
পরদিন অতি ভোরে, টুসুর ভাসান,
চৌদলে সাজায়ে সবে, নদীঘাটে যান

নদীতে মকর স্নান, সকলেই করে,

নদীঘাটে মেলা বসে, ঘাট যায় ভরে



বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, থাকে মোদের গাঁয়ে,
পাড়ার কারো ব্যামো হলে, তাকে দেয় সারিয়ে
বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, লোকটি খারাপ নয়,
পাঁচ পুরিয়ার পাঁচ সিকে দাম, স্পষ্ট ভাষায় কয়

ডাক্তার কবিরাজ গাঁয়েতে, আর তো কেহ নাই,
ব্যামো হলো আমরা সবাই, তার কাছেতেই যাই
এই তো সেদিন, পাড়ার পাঁচুর, হল ভীষণ জ্বর,
জ্বরের ঘোরে সর্বাঙ্গ তার, কাঁপছে থরো থর

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্যি মশাই, তাকে দেখার পরে,
ভয় পেয়ো না, দিচ্ছি ওষুধ, উঠবে তুমি সেরে
এই না বলে, বৈদ্যিমশাই, ওষুধ দিল তারে,
চার পুরিয়া দিচ্ছি ওষুধ, খাবে ভাল করে

যোলো আনায় চার পুরিয়া, ওষুধ খাবার পর,

ভাল হয়ে উঠল পাঁচু, নাইকো তার আর জ্বর










Tuesday, 12 January 2016

বিরহী কবির ব্যথা

ক্লান্ত পাখিরা বাসায় ফেরে, পশ্চিমে সূর্যি গেছে ডুবে,
সাঁঝের বেলায়, নামলো আঁধার, বইছে হাওয়া পূবে
তুলসী তলায়, জ্বলে ওঠে দীপ, দূরে শাঁখের শব্দ ওঠে,
এক এক করে, তারাদের দল, আকাশের গায়ে ফুটে

পথের বাঁকে শেয়াল ডাকে, পেঁচা ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ঘরের চালে দুটো, উড়ছে বাদুড়, বের হয়ে চুপিসাড়ে
সাঁঝের আঁধারে, কান পেতে শুনি, ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান,
জোনাকিরা সব, জ্বলে ওঠে গাছে, বোবা কান্নায় ম্রিয়মান

নিঝুম রাতে, শ্মশান ঘাটে, চিতা জ্বলে সারি সারি,
অলস মস্তিষ্কে বিকৃত যন্ত্রণা, রাতের ঘুম নেয় কাড়ি
শত যন্ত্রণা, দুঃসহ হয়ে, বিরহী কবির হৃদয়ে বাজে,

মৌন রাতি, ঘুমে অচেতন, আমি কেঁদে মরি লাজে