Sunday, 27 November 2016




আমার গাঁয়ে সবুজের অভিযান


এ গাঁয়ের মাটি আমার আপন 
আমার পূণ্য ও পবিত্র জন্মভূমি, 
এ মাটিতে ফলে সোনার ফসল 
সোনা ধানে ভরা খেতের জমি। 


গাঁয়ের পাশে বয়ে চলে নদী, 
গাঁয়ের মাঝিরা নৌকা চালায়। 
সকাল হলেই গাঁয়ের চাষীরা, 
কাস্তে হাতে নিয়ে মাঠে যায়। 



গাঁয়ের কামার, কামারশালায় 
জোরে জোরে হাতুড়ি চালায়, 
গাঁয়ের জেলেরা খালুই কাঁধে, 
মাছ ধরে আপন বাড়িতে যায়। 



গাঁয়ের তাঁতিরা, তাঁত বোনে, 
বোনে ধূতি কাপড় আর শাড়ি, 
গাঁয়ের কুমোর মাটি দিয়ে গড়ে 
মাটির কলসী ও মাটির হাঁড়ি। 



ক্লান্ত পথিক বসে এসে সব 
গাঁয়ের শেষে বটের ছায়ায়, 
সকাল সকাল নিয়ে গরুপাল 
গাঁয়ের রাখাল, বাঁশি বাজায়। 



খোলা আকাশে ভাসে শঙ্খচিল 
গাছে দোয়েল পাখি গায় গান, 
যেদিকে তাকাই দেখিবারে পাই 
আমার গাঁয়ে সবুজের অভিযান।



নির্জন পথে আঁধার নামে

নদীর কূলে পড়ে আসে বেলা চাষীরে ফেরে ঘরে,
দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে উঠে দীপ, সন্ধ্যা হলে পরে।
নির্জন পথে আঁধার নামে, জোনাকিরা সব জ্বলে,
অজয় নদী স্রোতের টানে, আনমনে বয়ে চলে।

শ্মশানঘাটে জ্বলিছে চিতা, দূরে শেয়ালেরা ডাকে,
হাতে লণ্ঠণ, নিয়ে প্রহরীরা, সারারাত ধরে হাঁকে।
বাঁশগাছের বনে চাঁদ উঠে হেসে আঁধার ঘুচে যায়,
জোছনারাতে মিটিমিটি জ্বলে তারা আকাশের গায়।

গাঁয়ের পথে কুকুর কাঁদে, পেঁচা ডেকে ওঠে রাতে,
বাদুড়েরা ওড়ে ঘরের চালায়, দালানের উঁচু ছাতে।
কূয়ো তলায় বেড়াল কাঁদে, সারা গ্রামখানি ঘুমায়,
ভোরের আলো ফুটে ওঠে, শেষ রাতি কেটে যায়।

পাখি ডাকে বায়ু বয়, জেগে ওঠে  সারা ভুবন,
প্রভাত সূর্য ছড়ায় কিরণ, ভরে ওঠে নয়ন মন।

Monday, 4 July 2016

আমাদের এই ছোট গ্রাম

আমাদের ছোট গাঁয়ে আছে ছোট ছোট মাটির বাড়ি,
গাঁয়ের পথে পুকুরপাড়ে আছে তাল খেজুরের সারি।
গাঁয়ের পাশ দিয়ে অজয় নদী বয়ে চলে অবিরাম,
গাছের সবুজ ছায়ায় ঘেরা আমাদের এই ছোট গ্রাম।

গাঁয়ের প্রান্তে বটের তলায় আছে শ্রীজগন্নাথের রথ,
গাঁয়ের মাঝে চারপাশে তার আঁকা বাঁকা গলি পথ।
আমবাগানের ভিতর দিয়ে আকাঁ বাঁকা গলি পথে,
কলসীকাঁখে গাঁয়ের বধূরা আসে রোজ জল নিতে।

পদ্ম দিঘির কালো জলে রোজ ছেলেরা সাঁতার কাটে,
পানকৌড়ি রোজ ডুব দিতে আসে পানাপুকুরের ঘাটে।
গাঁয়ের জেলে মাছ ধরে পুকুরেতে রোজ জাল ফেলে,
শংখচিল উড়ে চলে আকাশের গায়ে দুটি পাখা মেলে।

আমাদের গাঁয়ের মাঝখানে আছে নাটশালা চালাঘর,
সন্ধ্যায় খোল ও করতাল বাজে বসে কীর্তনের আসর।
বাঁশ বাগানের মাথার উপর দিয়ে উঠে চাঁদ আর তারা,
পাহারাদার লণ্ঠণ হাতে রোজ সারা রাত দেয় পাহারা।

Tuesday, 19 January 2016

গাঁয়ের মাটির টান

ফুল ফোটে বনে বনে,
বিহগের কলতান
প্রভাত পাখির কণ্ঠে শুনি
ঘুম ভাঙানোর গান

ভাঙা পাঁচিলে আছে বসে
দেখি ময়না চড়ুই পাখি,
ভোরের বেলা আমবাগানে
উঠলো কোকিল ডাকি


পূব গগনে সূর্য উঠেছে
ফুল ফোটে, মোরগ ডাকে
শিশুরা পড়িছে আপন মনে,
ফেরিওয়ালা রোজ হাঁকে

বাডি আমার পাথরচুড়ে,
অজয় নদীর ধারে
সাদা বকেরা আসে উড়ে
নদীতীরে দুই পাড়ে

আমার গাঁয়ের দক্ষিণেতে
কাঁটা কুলের বন
রাতে সেথা শেয়াল ডাকে
শিউরে ওঠে মন

গাঁ আমার, মাটি আমার,
এই গাঁ আমার জন্মভূমি
এই মাটিতে লভিয়া জনম

সত্যই ধন্য হয়েছি আমি










আমার গাঁ ও সবুজ ছায়া

যে দূরে সবুজ ছায়ায়, ছোট্ট আমার গ্রাম,
সামনে দিয়ে অজয় নদী, বইছে অবিশ্রাম
আমার গাঁয়ের পশ্চিম দিকে, কাঁটা কুলের বন,
ভোরের বেলা মোরগ ডাকে, ভরে উঠে মন

আমার গাঁয়ের উত্তর দিকে, তাল খেজুরের সারি,
পূবের পানে, সবুজ খেত, দেখতে সুন্দর ভারি
আমার গাঁয়ের দক্ষিণ দিকে, অজয় নদী বয়,
নদীর ঘাটে, সরু বালুচরে, নৌকা বাঁধা রয়

আমার গাঁয়ে রাঙামাটির, লাল ধূলো সরানে,
একতারাতে, মিঠে সুর, আছে বাউল গানে
আমার গাঁয়ে, আমবাগানে, কোকিল পাখি ডাকে,
পল্লীবধূ যায় জল আনতে, কলসি নিয়ে কাঁখে

সুর্য্যি ডোবে, সন্ধ্যা আসে, নামে সাঁঝের আঁধার,

জোছনায় আলো ঝরে, আমার গাঁয়ের চারিধার




মকর সংক্রান্তির মেলা

নদীর ঘাটে বসেছে আজ,
মকর সংক্রান্তির মেলা,
বসেছে দোকান সারি সারি,
আর সার্কাসের খেলা

দু আনার কেনা মাটির পুতুল,
তিন আনার বাঁশি,
হরেক মাল পাঁচ সিকে দাম,
সেথায় ভিড় বেশি

ময়রা ভোলা বসেছে দোকানে,
টাঙায়েছে সামিয়ানা
রসগোল্লা আর পানতোয়া,
সব পাবে আনা আনা

আলুর চপ ও তেলেভাজা,
পাবে তার দোকানে,
চায়ের ও পানের দোকান,
বসেছে এক কোণে

মনিহারীর দোকান কত,
বসেছে সারি সারি,
পুঁতির মালা ও কানের দুল,
দেখতে সুন্দর ভারি

চুড়ি, মালা, খোপার বল,
কিনতে ইচ্ছে হয়,
দাম শুনে মাথায় হাত,
কিনতে লাগে ভয়

মেলার মাঝে খোকন সোনা,
কাঁদছে বসে একা
হারিয়ে গেছে বাবা মা তার,
পায় না কেন দেখা ?

হাসির চেয়ে কান্না দামী,
আজকে মেলার ভিড়ে,
বসেছে মকর-সংক্রান্তির মেলা,

অজয় নদীর তীরে





পৌষ সংক্রান্তির দিনে

পৌষ মাসে পিঠেপুলি, মহা ধূমধাম,
ঘরে ঘরে পিঠে গড়ে, ধন্য পল্লীগ্রাম
দুধপুলি, গুড় পিঠে, নারিকেল আর,
সকলে করিছে পিঠে, সকল প্রকার

গুড় আর তিল দিয়ে, গড়ে পিঠে কেউ,
সারা গাঁয়ে বয়ে যায়, আনন্দের ঢেউ
সরা পিঠে, বাটি পিঠে, দুধ চাঁছি আর,
নলেন গুড়ের গন্ধ, ভাসে চারিধার

পৌষ মাসে শেষ দিনে, টুসু জাগরণ,
সারা রাত টুসু গান, হরষিত মন
পরদিন অতি ভোরে, টুসুর ভাসান,
চৌদলে সাজায়ে সবে, নদীঘাটে যান

নদীতে মকর স্নান, সকলেই করে,

নদীঘাটে মেলা বসে, ঘাট যায় ভরে



বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, থাকে মোদের গাঁয়ে,
পাড়ার কারো ব্যামো হলে, তাকে দেয় সারিয়ে
বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, লোকটি খারাপ নয়,
পাঁচ পুরিয়ার পাঁচ সিকে দাম, স্পষ্ট ভাষায় কয়

ডাক্তার কবিরাজ গাঁয়েতে, আর তো কেহ নাই,
ব্যামো হলো আমরা সবাই, তার কাছেতেই যাই
এই তো সেদিন, পাড়ার পাঁচুর, হল ভীষণ জ্বর,
জ্বরের ঘোরে সর্বাঙ্গ তার, কাঁপছে থরো থর

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্যি মশাই, তাকে দেখার পরে,
ভয় পেয়ো না, দিচ্ছি ওষুধ, উঠবে তুমি সেরে
এই না বলে, বৈদ্যিমশাই, ওষুধ দিল তারে,
চার পুরিয়া দিচ্ছি ওষুধ, খাবে ভাল করে

যোলো আনায় চার পুরিয়া, ওষুধ খাবার পর,

ভাল হয়ে উঠল পাঁচু, নাইকো তার আর জ্বর